Homeমতামত১৮ দফা কর্মসূচী

১৮ দফা কর্মসূচী

-

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল

আশু কর্মসূচি এবং সরকার ও সংবিধান

ভূমিকা

বাংলাদেশের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা এখন দ্রুত ভেঙে পড়ছে। ভাঙনকালীন যে নৈরাজ্য স্বাভাবিক সে নৈরাজ্যই এখন বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। এই নৈরাজ্য যে শুধু শাসক শ্রেণীর প্রশাসন ব্যবস্থাতেই বিপর্যয় সৃষ্টি করছে তাই নয়, জনগণের জীবন এর দ্বারা হাজার গুণ বেশি বিপর্যস্ত হচ্ছে। সর্বস্তরের জনগণের জীবন এখন গ্রাম গ্রামান্তর থেকে শহরাঞ্চল পর্যন্ত এক চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। জনগণ এই অনিশ্চয়তার অবসান চান, তাঁরা চান সমগ্র সমাজ ও শাসন ব্যবস্থার এক মৌলিক পরিবর্তন, যে পরিবর্তন প্রচলিত পদ্ধতিতে কোন নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভব নয়।

বাস্তবতঃ সাম্রাজ্যবাদের সাথে অঙ্গীভূত বাংলাদেশের লুন্ঠনজীবী সন্ত্রাসী শাসক শ্রেণী এবং সারা দেশের শ্রমজীবী জনগণ, শ্রমিক কৃষক মধ্যবিত্ত, পরস্পরের বিরুদ্ধে এখন মুখোমুখী। এই মুখোমুখী অবস্থান অদূর ভবিষ্যতে উভয়কে এক চরম সংকটের মধ্যে নিক্ষেপ করবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

এই সম্ভাবনা সারা দেশের অর্থনীতি, সামাজিক সম্পর্ক, সংস্কৃতি, রাজনীতির বাস্তব অবস্থার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। একে কোন ইচ্ছাপূরণ চিন্তা (wishful thinking) মনে করার কারণই আর নেই। এটা মনে করা বাস্তব পরিস্থিতির বিকাশধারার দিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখারই সামিল। কাজেই এই সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই এদেশের জনগণকে সংগ্রামের পদ্ধতি ও কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হবে।

এ দেশে জনগণ দীর্ঘদিন ধরে শোষক শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সংগ্রাম করে আসছেন, নির্বাচনের পর নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁরা একের পর এক সরকারকে ক্ষমতাসীন করেছেন। এইভাবে নির্বাচিত প্রত্যেকটি সরকারই জনগণকে দেওয়া সকল প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণভাবে ভঙ্গ করে দুর্নীতি, লুন্ঠন ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনজীবনকে উত্তরোত্তর বিপর্যস্ত করে আসছে। এ কারণে এ বিষয়টি এখন স্পষ্ট হয়েছে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করে এদেশের জনগণের মুক্তি তো দূরের কথা, তাঁদের সামান্য কিছু পাওয়ারও সম্ভাবনা নেই।

এই পরিস্থিতিতে দেশে কিছু ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন হচ্ছে। একের পর এক ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠে সাময়িকভাবে ও ক্ষেত্রবিশেষে শক্তিশালী হলেও তা মৌলিক সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন নয়। ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনের মধ্যে যারাই নিজেদেরকে আটকে রাখে, তারা সমাজের বিদ্যমান মৌলিক ভিত্তি ও কাঠামো রক্ষা করে চলমান নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে চায়। এ কারণে ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন করে যাওয়া এক অপরিহার্য রাজনৈতিক কর্তব্য হলেও শুধু ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনের চরিত্র হলো মূলতঃ বুর্জোয়া-পেটি বুর্জোয়া।

শ্রমজীবী শ্রেণী, বিশেষতঃ শ্রমিক শ্রেণীর ওপরই শোষণ নির্যাতন সব থেকে তীব্র ও ব্যাপক এবং তাঁদের মধ্যেই পরিবর্তনের তাগিদ সব থেকে শক্তিশালী। এ কারণে তাঁরাই এই শোষণ ব্যবস্থা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে মূল শক্তি। সমাজের সকল সংগ্রামী শক্তির সহায়তায় তাঁরাই এই শোষণ ব্যবস্থার পরিপূর্ণ অবসান ঘটাতে সক্ষম। শ্রেণী হিসাবে এটাই তাঁদের ঐতিহাসিক ভূমিকা।

আমরা যে কর্মসূচি কনভেনশনের মাধ্যমে উপস্থিত করছি এটা এক মৌলিক রণনীতিগত কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের অর্থই হলো, সমাজের এক মৌলিক পরিবর্তন সাধন করা। কাজেই এই কর্মসূচিতে এমন বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলির বাস্তবায়ন হলে অন্য হাজার রকম গণতান্ত্রিক ও গণমূখী কর্মসূচির বাস্তবায়ন এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অব্যাহত থাকবে।

আশু কর্মসূচি

১. দেশীয় পুঁজির ওপর জনগণের অধিকার এবং মালিকানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে:

(ক) লুন্ঠনকারীদের সকল পুঁজি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।
(খ) সকল সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।
(গ) বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী সংস্থার সাথে সকল প্রকার অসম ঋণ চুক্তি বাতিল করা।

২. (ক) ছোট ও মাঝারি জমির মালিক খোদ চাষীর হাতে জমি রেখে বাকী সকল জমি ও জলাশয় জাতীয়করণ। তবে যে সকল ধনী কৃষক আন্দোলন ও পরিবর্তনের বিরোধিতা করবে না ও পক্ষে থাকবে একটি নির্দিষ্ট সিলিং এর আওতায় তাদের হাতে জমি রাখা হবে। এই জমি তাদেরকে চাষ আবাদ করতে হবে নিজস্ব পুঁজি বিনিয়োগ করে। যে শ্রমিকরা এই জমি চাষ করবে তাদেরকে সমবায় কর্তৃক নির্ধারিত মজুরি দিতে হবে এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। উৎপাদিত ফসল তাদেরকে বিক্রি করতে হবে কৃষি সমবায় কর্তৃক নির্ধারিত দামে।

হাট, বাজার, জলাশয়, ঘাট, বন, পাহাড়, সড়কসহ সকল প্রকার ইজারা প্রথার বিলোপ সাধন করা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জাতি ও জাতিসত্তাসহ অন্য জাতি ও জাতিসত্তা সমূহের ভূমির ক্ষেত্রে বংশপরম্পরাগত (prescriptive right) ভূমি অধিকার স্বীকৃতিপূর্বক দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতি ও জাতিসত্তার ভূমি অধিকার প্রদান এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা স্থানীয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের উপর অর্পণ করা।

(খ) চাষের জন্য জমি বন্টন, উৎপাদনের জন্য ঋণের চাহিদা পূরণ, উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের (inputs) ব্যবস্থা, উৎপাদকের প্রাপ্য মজুরি অথবা ফসলের অংশ নির্ধারণ, সাধারণ ব্যয় নির্বাহের জন্য ফসলের অংশ (সমবায় ও রাষ্ট্রের) নির্ধারণ, এবং ফসল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের জন্য গ্রামীণ জনগণের ভোটে গ্রাম পর্যায়ে কৃষি সমবায় গঠন করা।

(গ) বিভিন্ন অঞ্চলে অঞ্চলগত সুযোগ সুবিধার প্রতি দৃষ্টি রেখে রাষ্ট্রীয় খামার প্রতিষ্ঠা। রাষ্ট্রীয় খামার ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রত্যেক খামারে শ্রমিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা।

৩. ছোট ও মাঝারি শিল্প বাদ দিয়ে সকল বড় শিল্প জাতীয়করণ। জাতীয়করণকৃত শিল্প ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক শিল্প ইউনিটে শ্রমিকদের সাধারণ ভোটে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা।

রাষ্ট্রীয় খাতের এবং তার বাইরে ছোট ও মাঝারি শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মনুষ্যোচিত জীবন যাপনের উপযুক্ত মজুরি ধার্য করা। সকল শ্রমিকের জন্য ৪৮ ঘন্টার শ্রম-সপ্তাহ কার্যকর করা। শ্রমিক হিসেবে শ্রমিকদের সকল অধিকার অক্ষুন্ন রাখা।

৪. সমগ্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য জাতীয়করণ। ছোট ও মাঝারি অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্য এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাতে চোরাচালান, কালোবাজারী এবং ইচ্ছেমত মূল্য বৃদ্ধির কোন সুযোগ না থাকে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশেষতঃ খাদ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী রেশনিং ব্যবস্থা চালু রাখা।

৫. ব্যাংক বীমাসহ সকল দেশী-বিদেশী আর্থিক সংস্থা জাতীয়করণ করা।

৬. (ক) বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী দেশের সাথে সকল প্রকার প্রকাশ্য ও গোপন অসম সামরিক ও বেসামরিক চুক্তি বাতিল করা। গোপন চুক্তিগুলি জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা।

(খ) অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও রাজনীতি ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার সাম্রাজ্যবাদী সাহায্য সংস্থার (এনজিও) চক্রান্ত এবং অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা নিষিদ্ধ করা। তাদের সকল পুঁজি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।

৭. সকল কর্মক্ষম জনগণের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা এবং অনাথ, বৃদ্ধ ও কর্মশক্তিহীনদের যাবতীয় ব্যয়ভার রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করা।

৮.  জাতি, ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে সকলের সমান গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা। প্রত্যেক জাতি ও জাতিসত্তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর নিজস্ব ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম পালনের অধিকার, প্রত্যেক ভাষাভাষীর নিজস্ব ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা ও ভাষা চর্চার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মের সকল প্রকার রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

সামাজিক সম্পর্ক, রাজনীতি, মজুরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার অবসান এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
দলিত নামে পরিচিত তথাকথিত নিম্ন বর্ণের সকল জনগোষ্ঠীর প্রতি অসম ও বৈষম্যমূলক সামাজিক আচরণের ও তাদের উপর সর্বপ্রকার শোষণ নির্যাতনের সম্পূর্ণ অবসান করা।

৯. সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ এবং অবৈতনিক করা। একাধিক প্রকারের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে এক সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ছাত্রদের চিত্তের বিকাশ, তাদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধের চেতনা সৃষ্টি নিশ্চিত করা। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। মাধ্যমিক ও কারিগরী শিক্ষা উৎসাহিত করা। উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং গবেষণার জন্য যথোপযোগী ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

১০. গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের উদ্দেশ্যে সংস্কৃতিক্ষেত্রে সকল প্রকার সামন্তবাদী চিন্তা চেতনা ভাবধারা ও লুম্পেন সংস্কৃতির প্রভাব নির্মূল করা এবং সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা। দেশীয় ঐতিহ্যের মধ্যে যা কিছু মানবিক ও প্রগতিশীল তাকে রক্ষা করা এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংস্কৃতির প্রতিটি শাখার বিকাশ সাধন করা।

১১.  বিনামূল্যে চিকিৎসা লাভের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে দ্রুত সম্প্রসারণ। স্বাস্থ্য সুবিধা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে মেডিক্যাল কলেজ, নার্স ট্রেনিং সেন্টার, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ইত্যাদির সংখ্যা ব্যাপকভাবে ও দ্রুত বৃদ্ধি করা। ঔষধপত্র লভ্য করার জন্য ঔষধ শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ করা।

১২.  সকল জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নিশ্চিত করা এবং গৃহ উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে কার্যকর করা।

১৩.  পরিবহণ ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ, সম্প্রসারণ এবং সুলভ করা।

১৪.  পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে পরিবেশকে যেভাবে দূষিত করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরিবেশ দূষণ সম্পূর্ণ বন্ধ করা।

১৫.  পানি, তেল গ্যাস সহ সকল প্রকার জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও জনস্বার্থে ব্যবহার করা।

১৬.  গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সকল প্রকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

১৭. প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটারের প্রত্যক্ষ ভোটে ইউনিয়ন, থানা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বমূলক পরিষদ নির্বাচন করা। সকল পর্যায়েই নির্বাচিত ব্যক্তিকে বিশেষ পরিস্থিতিতে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাহার (recall) ব্যবস্থা রাখা ও কার্যকর করা। বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক, বিচার বিভাগীয় ও অন্যান্য সরকারি কর্তৃপক্ষ ঐ পর্যায়ের প্রতিনিধি পরিষদ কর্তৃক মনোনীত করা।

১৮.  বিশ্বের সকল দেশে জনগণের গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী সংগ্রামের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং তাদের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখা।

সরকার ও সংবিধান

ক্ষমতা ছাড়া কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রশ্ন উঠে না। কর্মসূচির সাথে ক্ষমতার প্রশ্ন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু তাই নয়, কর্মসূচিই ক্ষমতার চরিত্র নির্ধারণ করে, আবার ক্ষমতার চরিত্রও নির্ধারণ করে কর্মসূচির চরিত্র। জনগণের স্বার্থে যে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয় সেটা কার্যকর করা জনগণের নিজস্ব পরীক্ষিত সংগঠন ও তাদের প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতার ব্যবহার ও প্রয়োগ রাষ্ট্রীয়ভাবেই হতে হয়। আবার রাষ্ট্রকে এ কাজ করতে হয় একটি সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে। কাজেই সাধারণ অবস্থায় কোন গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন উপযোগী সাংবিধানিক কাঠামো। তবে ক্ষেত্র বিশেষে, বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে, জরুরী ভিত্তিতে কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রয়োজন হলে তখন রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী শক্তি সেটা করতে পারে এবং প্রকৃতপক্ষে করেও থাকে। এই অবস্থা দেখা দেয় একটি সংবিধান অকার্যকর হয়ে পড়া এবং অন্য একটি উপযোগী সংবিধান তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মধ্যবর্তী অবস্থায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর এবং ১৯৭৩ সালে নতুন সংবিধান কার্যকর হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকারকেও এভাবে কিছু আবশ্যিক কাজ করতে হয়েছিল। কারণ বিশেষ জরুরী পরিস্থিতিতে যে কোন শ্রেণীর সরকারের সামনে অন্য কোন পথ খোলা থাকে না।

কনভেনশনে যে কর্মসূচি উপস্থিত করা হচ্ছে সে কর্মসূচির বাস্তবায়ন বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে সম্ভব নয়। এই সংবিধান অবশ্যই আমূলভাবে পরিবর্তন করতে হবে। এর পরিবর্তে এমন একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান দরকার যা জনগণের সংগ্রামের এবং তাদের গণতান্ত্রিক শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষমতা ধারণ করবে এবং যার কাঠামোর মধ্যে সকল প্রকার  গণতান্ত্রিক কর্মসূচির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

প্রাথমিকভাবে এই ক্ষমতা প্রয়োগ সম্ভব তাদেরই দ্বারা, জনগণের সেই সব সংগঠনের দ্বারা, যারা শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সারা দেশে সব রকম কার্যকর পদ্ধতিতে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিচালনা করে চলবে এবং এই সংগ্রামের শীর্ষ পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করবে।

এইভাবে ক্ষমতা অর্জনের পর প্রয়োজন হবে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন, যার প্রাথমিক কাজ হবে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের ভিত্তিতে একটি সংবিধান সভার নির্বাচন। এইভাবে নির্বাচিত সংবিধান সভাই নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে এবং সেই সংবিধানের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত পার্লামেন্ট হিসেবে কাজ করবে। এই পার্লামেন্টই একটি নতুন সরকার গঠন করবে যা অস্থায়ী সরকারের স্থলাভিষিক্ত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Must Read

Political Ideology In Context of Future State and World Order

রাজনৈতিক আদর্শ : ভবিষ্যতের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিশ্ব ব্যবস্থা প্রসঙ্গে

মানুষ জন্মগতভাবে যে জীবন ও জীবন-পরিস্থিতি লাভ করে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। সে উন্নততর জীবন ও পরিবেশ আশা করে। অনেকে তাদের চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি...