Homeদক্ষিণ এশিয়াগৈরিক ভারত

গৈরিক ভারত

-

১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভারতে জরুরী অবস্থা জারি করেছিলেন স্রেফ গদি হারানোর ভয়ে। সংবিধান প্রদত্ত ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সবই বিলুপ্ত হয়েছিল। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তাঁকে সরে যেতে হয়েছিল। আবার তাঁর বিরোধীদের বদান্যতাতেই তিনি ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু সে অন্য কথা।

এই মুহূর্তে ভারতে কোনো ঘোষিত জরুরী অবস্থা নেই। তৎসত্ত্বেও মানুষকে খুব সাবধানে কথা বলতে হয়। বিশেষত, আন্তর্জালনির্ভর সামাজিক মাধ্যমগুলিতে বা জনসভায় বক্তৃতায় নেতা-মন্ত্রী-সরকারের সমালোচনা করলে যে কোনো মুহূর্তে পুলিশ আপনাকে অভ্যর্থনা করে তুলে নিয়ে যেতে পারে। ২০১০ থেকে ২০২০, এই দশ বছরে ভারতে ১৫৪ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার অথবা আটক করা হয়েছিল। তার মধ্যে প্রথম চার বছর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আমলে ১৯ জন এবং পরবর্তী বিজেপি শাসনাধীন ছয় বছরে ১৩৫ জন সাংবাদিককে সরকারি রোষের শিকার হতে হয়েছে। সিংহভাগ গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে বিজেপি/এনডিএ শাসিত রাজ্যগুলিতে (Behind Bars- Arrest and Detention of Journalists in India 2010-2020, by Geeta Seshu)। কাশ্মীরের মানুষ ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা’ শব্দগুলি বোধ হয় ভুলতে বসেছে। কাশ্মীর টাইমস-এর সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন মার্কিন মুলুকের পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমসে সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধে মন্তব্য করেছেন, “The media stands as one of the last remaining institutions capable of preventing India’s descent into authoritarianism. But if Mr Modi succeeds in introducing the Kashmir model of information control to the rest of the country, it won’t be just press freedom that is at risk, but Indian democracy itself.” (Modi’s Final Assault on India’s Press Freedom Has Began)।

সাম্প্রতিক ভারতবর্ষের সবথেকে বড়ো ধরপাকড়ের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্রের পুনা শহরে এক দলিত সমাবেশে পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা ঘটানো হয়। হিংসাত্মক আক্রমণে একজন নিহত হয়েছিলেন। অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন হিন্দুত্ববাদী নেতা মিলিন্দ একবোতে এবং শম্ভু ভিদে। একবোতেকে পুলিশ প্রায় দুইমাস পরে গ্রেপ্তার করলেও, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জামিনে মুক্ত করে দেয়। অপর অভিযুক্ত শম্ভু ভিদে-র বিরুদ্ধে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে ভীমা-কোরেগাঁও সমাবেশে ‘বিশৃঙ্খলা’কে কেন্দ্র করে ‘মাওবাদী ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে একের পর এক গ্রেপ্তার করা হয় সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, সুধীর ধাওয়ালে, রোনা উইলসন, সোমা সেন, মহেশ রাউত, ভারাভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেরা, ভার্নন গনসালভেস, গৌতম নাভলাখা, আনন্দ তেলতুম্বদে, ফাদার স্ট্যান স্বামী, হানি বাবু, সগর গোর্খে, রমেশ গাইচোর, জ্যোতি জগতাপ প্রমুখকে- যাঁদের প্রত্যেকেই ভারতের সাংবাদিক, শিক্ষা বা সাংস্কৃতিক জগতে কিংবা দলিত আন্দোলনের কর্মী হিসাবে এক একটি উজ্জ্বল নাম। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগ আনা হয়েছিল। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ইউএপিএ আইনে। স্ট্যান স্বামী কারান্তরালেই প্রাণ হারিয়েছেন। তিনজন দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পর জামিনের আদেশ পেতে সমর্থ হয়েছেন। একজন গৃহবন্দী এবং ১১ জন এখনও কারান্তরালে কাল কাটাচ্ছেন।

‘মাওবাদী’, ‘আরবান নকশাল’, ‘সন্ত্রাসবাদী’, ‘ধর্মীয় বা সামাজিক সংহতি বিনষ্টকারী’ ইত্যাদি শব্দগুলি বিজেপি প্রশাসনের বেশ পছন্দের। মোটামুটিভাবে এইসব শব্দগুলির প্রয়োগেই দেশজুড়ে ধরপাকড় অব্যাহত। গত ছয় বছরে (২০১৬-২০২১) গড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষকে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তার করা এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার মধ্যে দুস্তর ব্যবধান। সরকার বা সংঘ পরিবারের সমালোচক, এমন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কম্পিউটার হ্যাক করে স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে আপত্তিকর তথ্য অনুপ্রবিষ্ট করিয়ে মিথ্যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্তদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। আর বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া? সে তো এখন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বছর দুয়েক আগে সুইডেনের ভি ডেম ইন্সটিটিউট তাদের গণতন্ত্র সূচক রিপোর্টে (২০২২) ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র’ (Electoral Democracy) আখ্যা দিয়েছিল। কিন্তু শুধু স্বৈরতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে বিজেপি শাসনকে ব্যাখ্যা করা যায় না। বিজেপি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) রাজনৈতিক সংগঠন। বিজেপি শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য, আরএসএস আদর্শে জনমানসকে সঞ্জীবিত করে শাসকশ্রেণীর ‘হেজিমনি’ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, যার সংঘীয় সংস্করণ ‘গৈরিকীকরণ’। ‘এক জাতি-এক দেশ-এক সংস্কৃতি’ নীতি এই গৈরিকীকরণের অন্যতম প্রকরণ। জাতি বলতে ‘হিন্দু’, দেশ বলতে ‘হিন্দুত্ববাদী ভারত’, সংস্কৃতি বলতে ‘মনুবাদ’।

গৈরিকীকরণ ভারতের ইতিহাস-বিজ্ঞান সবকিছুই বদলে দিতে শুরু করেছে। গত বছর (২০২২) নভেম্বর মাসে সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব হিস্টোরিকাল রিসার্চ (আইসিএইচআর) রচিত “ভারত – লোকতন্ত্রের জননী” শিরোনামাঙ্কিত এক চিন্তাপত্র (concept document) সরকারি উদ্যোগে প্রচার করা হয়। চিন্তাপত্রের মূল বিষয়বস্তু,

“In India, from the Vedic times itself, two kinds of states, janapada and rajya have been in existence. The Indian experience evolved its own form of governance at the levels of the village and the central polity… that enabled them to remain unaffected by and large by the changing kingdoms/empires particularly those of the invaders hostile to Hindu culture. 

This explains the survival of Hindu culture and civilization in the face of 2000 zears of inventions by alien ethnicities and cultures. This became possible because the Hindu mind from the beginning addressed the central question of how to weld this vast multiplicity that is India into a single larger community and from ancient times a geo-cultural definition has been given to this entity, rashtra, Bharata.”

ইতিহাসে পণ্ডিত না হয়েও এটা বলা যায় যে, বৈদিক যুগে ‘হিন্দু’-র কোনো অস্তিত্ব ছিল না। রমিলা থাপার বলেছেন, “পর্ব বিভাগের পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু কথাটির প্রকৃত অর্থ কি, এ প্রশ্নও তোলা যেতে পারে। ভারত সম্পর্কিত প্রাক-ইসলামীয় উপাদানসমূহে কথাটি পাওয়া যায় না। হিন্দ্ (ইন্ডিয়া) দেশে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বর্ণনা করার জন্যে প্রথমে আরবরা এবং পরে অন্যরা এটি ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ ‘হিন্দু’ সংজ্ঞাটি গোড়ায় হিন্দুরা নিজেরা সৃষ্টি বা ব্যবহার করেন নি, এটি ছিলো একটি বিদেশী শব্দ যা পরে হিন্দুরা গ্রহণ করেছেন। আজকের দিনে আমরা যাকে হিন্দু বলে স্বীকার করি, অতীত যুগে তার প্রায় কোনো পরিচয়ই মিলবে না। আজকের অর্থে হিন্দুর উন্মেষ ঘটে গুপ্তযুগের পরে, পঞ্চম খ্রীস্টাব্দে।” (সাম্প্রদায়িকতা ও ভারত-ইতিহাস রচনা, রমিলা থাপার, হরবংশ মুখিয়া, বিপান চন্দ্র, কে পি বাগচী, কলকাতা) আবার খ্রীস্টপূর্ব ১০০০ সাল থেকে ১২০০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত, যেটাকে “মনে করা হয় হিন্দুযুগ”, সেটাও থাপারের মতে “এ যুগকে হিন্দুযুগ মনে করা সঠিক নয়, কারণ মৌর্য, ইন্দো-গ্রীসিয়, শক, কুষাণ প্রভৃতি বহু প্রধান রাজবংশই অহিন্দু ছিলো।”

তাছাড়া সমাজবিকাশের স্বাভাবিক ধারায় প্রাচীন বৈদিক ভারতে যে ‘জনপদ’গুলি গড়ে উঠেছিল, সেগুলি যে একান্তভাবেই তৎকালীন উপজাতিগুলির সমাজকাঠামোর অংশ ছিল, একথা প্রত্যেক ঐতিহাসিকই স্বীকার করেন। “আর্যদের উপজাতিগুলি যাঁদের দ্বারা শাসিত হত তাঁদের উপাধি ছিল রাজা। রাজা কিন্তু শাসক হিসেবে কোনো সার্বভৌম বা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না। উপজাতিগুলির শাসন পরিচালনার দায়িত্ব অন্ততঃ আংশিকভাবে ন্যস্ত ছিল ‘সভা’ ও ‘সমিতি’ নামে গঠিত পরিষদগুলির উপর।” (অতীতের উজ্জ্বল ভারত, এ এল ব্যাসাম রচিত The Wonder That Was India গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, কলকাতা) একই ব্যাখ্যা দিয়েছেন রমিলা থাপার। পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি গ্রন্থে ফ্রেডারিক এঙ্গেলস মর্গান-কে উল্লেখ করে দেখিয়েছেন আমেরিকার আদি ইন্ডিয়ান সমাজেও ‘উপজাতীয় পরিষদ’ ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ও উল্লেখ করেছেন, “পৃথিবীর বাকি সব মানুষের মতোই আর্যরাও এককালে গণ-সমাজেই বাস করতেন।” এবং “গণ বলতে আসলে যাই বোঝাক না কেন, এ-বিষয়ে এতোটুকুও সন্দেহের অবকাশ নেই যে, তা একরকমের সমাজসংগঠন এবং তার মধ্যে সাধারণতান্ত্রিক স্বায়ত্বশাসনের আয়োজন সত্যিই ষোলো আনা।” (লোকায়ত দর্শন) অর্থাৎ এই ধরনের গণ-সমাজ পৃথিবীর সর্বত্র মানব সমাজসংগঠনের আদিরূপ এবং এই “প্রাগ-বিভক্ত সমাজের ধ্বংসস্তূপের উপরই রাষ্ট্রশক্তির আবির্ভাব হয়েছে” যদিও “সারা ভারতবর্ষ জুড়ে একসঙ্গে তা ঘটেনি। শ্রেণী-বিভক্ত সমাজের পাশেই থেকেছে প্রাগ-বিভক্ত সমাজ। এমনকি, প্রাগ-বিভক্ত সমাজ যেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে সেখানেও তার সমস্ত চিহ্ন নির্মূল হয়ে যায়নি।” (পূর্বোক্ত)

সুতরাং, বুঝতে অসুবিধা হয় না, আইসিএইচআর-কে দিয়ে কৌশলে যেটা বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে বৈদিক যুগের গণতান্ত্রিক সমাজ-সংগঠনগুলি ‘হিন্দু সভ্যতার’ অবদান এবং ‘ভারতবর্ষের এই বিশাল বহুত্বকে … একক বৃহত্তর সম্প্রদায়ে অঙ্গীভূত করার (weld) হিন্দু মনন’ এই সভ্যতাকে রক্ষা করেছে- তা আদতে ভারতের ইতিহাস গৈরিকীকরণের নবতম অপচেষ্টা মাত্র।

অবশ্য আইসিএইচআর-এর এই ভূমিকা নতুন নয়। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই ইতিহাস-বিজ্ঞান-সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আরএসএস বা সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের হাতে প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রণভার অর্পণ করা শুরু করে। সেই সময় থেকেই এই প্রতিষ্ঠানগুলি গৈরিকীকরণ প্রকল্পের প্রধান বাহন হয়ে ওঠে। আইসিএইচআর-এর পূর্বতন সঙ্ঘপন্থী চেয়ারম্যান বলতে দ্বিধা করেননি যে, পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতে বিমান ব্যবহার হতো, পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ হতো ইত্যাদি। বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চ (২০১৯) থেকে বিজ্ঞানীদের হতবাক করে দেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অক্লেশে ঘোষণা করেন “কয়েক হাজার বছর আগে এদেশে স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা হয়েছিল”। পরিকল্পিত পথে এই গৈরিকীকরণের একমাত্র লক্ষ্য ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতবাদ প্রসারের মাধ্যমে ফ্যসিবাদী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করা। গৈরিকীকরণের এই কার্যক্রম শুধুমাত্র এলিট সংস্থাগুলির উচ্চস্তরে আবদ্ধ নেই, স্কুলপাঠ্য বইতেও অপবিজ্ঞানের বিস্তার চলছে।

যেটা সমগ্র ভারতবাসীর কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে ঊঠেছে, তা’ হলো বিচার বিভাগ, বিশেষত বিচারকরাও গৈরিকীকরণের প্রভাবমুক্ত থাকছেন না। বিষয়টা স্পষ্ট করেছেন প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ডঃ মোহন গোপাল। গত ফেব্রয়ারি মাসে “Executive Interference in Judicial Appointments” শীর্ষক আলোচনা সভায় ডঃ গোপাল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য উপস্থাপন করে উল্লেখ করেন যে, “এনডিএ ক্ষমতায় আসার পর নয়জন বিচারপতি, যাঁদের মধ্যে পাঁচজন এখনও বিচারাসনে আসীন, তাঁদের আদেশনামায় পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সংবিধানের মধ্যে আবদ্ধ থাকলে চলবে না। এবং অযোধ্যা মামলার ক্ষেত্রে ঠিক তাই হয়েছে। বিচারকদের কেউ কেউ আইনের সীমা লঙ্ঘন করে মামলার রায় দিয়েছেন। ঐতিহ্য অনুগামী এইরূপ ধর্মতান্ত্রিক বিচারকদের সংখ্যা, যাঁরা ধর্মের মধ্যে আইনের উৎস খোঁজেন, দ্রুতহারে বাড়ছে।

(…after the NDA has come to power, nine judges of whom five are still on the bench, I won’t name anyone but they have explicitly in their judgements indicated that we have to look beyond the Constitution. And that is what happened for example in Ayodhya case. Some of the judges went beyond the law to decide the case. This number of judges who are traditionalist, theocratic judges, who will find the source of law in religion, has sharply increased, – Live Law 18 Feb 2023)

বিশ্বায়নের নয়া অর্থনীতি বিশ্বে বৈষম্য বৃদ্ধির নয়া রেকর্ড স্থাপন করেছে এবং ভারত বিশ্বের সর্বাধিক বৈষম্যপূর্ণ দেশগুলির অন্যতম। দেশের সম্পদের সিংহভাগ আত্মসাৎ করছে অতি-সম্পদশালী পরিবারগুলি, আর দেশের সিংহভাগ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে। সম্পদ যা সৃষ্টি হচ্ছে, তার ৪০ শতাংশ ভোগ করছে জনসংখ্যার ১ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশের ভাগে পড়ে মাত্র ৩ শতাংশ (সূত্র- অক্সফ্যাম)। একই সাথে বাড়ছে দেশে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা এবং ক্ষুধার্ত জনসমষ্টি। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে তো প্রমাণ হয়ে গেছে, সরকারি উদারতায় কীভাবে কোনপথে দোস্তপুঁজির সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে। সামগ্রিক এই বৈষম্য ও শোষণকে আড়াল করতেই গৈরিকীকরণের আয়োজন। ধর্মীয় বিদ্বেষ, কুসংস্কার ও উগ্র জাতীয়তাবাদে ইন্ধন দিয়ে সামাজিক বিভাজনের মাধ্যমে শাসক শ্রেণী মানুষের নজর ঘুরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা নিয়েছে। ভোটযুদ্ধের সেনাপতিরা যখন ভোটের অঙ্ক কষেন, আরএসএস তখন দেশের প্রান্তে প্রান্তে শাখা বিস্তার করে চলে। এভাবেই ‘গণতন্ত্রের জননী’ প্রচারের তলায় চলে গণতন্ত্রের হননকার্য।

(প্রণব দে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, অনীক)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Must Read

Sri Chandicharan Sen's Queen of Jhansi

শ্রীচন্ডীচরণ সেনের ‘ঝান্সীর রাণী’

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে দিল্লি আগ্রা পতনের পর বিদ্রোহের কেন্দ্র হয়ে ওঠে মধ্য প্রদেশের ছোটো রাজ্য ঝাঁসী। ঝাঁসীর রাণী লক্ষীবাইয়ের নেতৃত্বে সেখানে বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিল।...